পাগড়ি বিতর্কে হাওড়া থানায় অভিযোগ দায়ের শিরোমণি নেতার, নালিশ সংখ্যালঘু কমিশনেও…
বিজেপি’র নবান্ন অভিযানের দিন পাগড়ি বিতর্কের জেরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেন শিরোমণি আকালি দল (SAD)-এর নেতা মনজিন্দর সিং সিরসা। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে দাবি করে, ৮ অক্টোবর নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। অভিযানের নামে হাওড়া, কলকাতায় বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশের বাধায় খণ্ড ‘যু’ দ্ধ বেধে যায়। হাওড়ার বঙ্গবাসীর কাছে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের মিছিলে বাধা দিলে, দু’পক্ষের মধ্যে সং’ ঘ’ র্ষ বাধে। পুলিশের সঙ্গে ধ’ স্তা/ ধস্তি’ র সময় পাগড়ি খুলে যায় বলবিন্দর সিং নামে এক ব্যক্তির। তাঁর কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করে একটি আগ্নেয়াস্ত্র। পরে জানা যায়, তিনি বডিগার্ড।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সে ছবি শেয়ার হলে, সমালোচনার মুখে রাজ্য পুলিশ। নানা মহল থেকে দোষী পুলিশ অফিসারের শাস্তির দাবি তোলা হয়। যদিও, রাজ্য পুলিশের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, পুলিশ ওই শিখ ব্যক্তির মাথা থেকে পাগড়ি টেনে খোলেনি। ধ’ স্তা’ ধ’ স্তি’ র সময় পাগড়ি আপনাআপনি খুলে যায়। এবং এ-ও জানানো হয়, বলিন্দর সিংকে পাগড়ি পরিয়ে তার পরেই গ্রে’ ফ’ তার করা হয়েছে।
বক্তব্যের সপক্ষে রাজ্য পুলিশের তরফে ট্যুইটারে একাধিক ছবিও শেয়ার করা হয়েছে। তার পরেও পাগড়ি বিতর্ক থামেনি। উলটে বিজেপি এই বিতর্ক আরও উসকে ঘোলাজলে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। বিজেপি দাবি করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুলিশ পাগড়ি খুলে শিখদের অপমান করেছে।
I have filed a police complaint in Howrah police station for registration of FIR u/s 295A against Kolkata Police officers who behaved barbarically with Balwinder Singh
I hope the DGP @WBPolice will take action on my complaint and ensure justice pic.twitter.com/mfp0v9Ufli
— Manjinder Singh Sirsa (@mssirsa) October 12, 2020
পুলিশের দাবি, আ’ গ্নে’ য়া’ স্ত্র নিয়ে মিছিলে হাঁটছিলেন বলবিন্দর নামে ওই ব্যক্তি। পুলিশের নজরে পড়ার পরেই অভিযুক্তকে জিগ্যাসাবাদ শুরু হয়। সেসময় দু’ র্ঘ’ টনাব’ শত পাগড়ি মাথা থেকে খুলে যায়। কোনও পুলিশ অফিসার জোর করে পাগড়ি টেনে খুলে দেয়নি। কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের উদ্দেশ্য নয়।
শিরোমণি আকালি দলের নেতা মনজিন্দর সিং সিরসা এদিন ট্যুইট করে জানান, সোমবার (১২ অক্টোবর) হাওড়া থানায় কলকাতা পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তিনি একটি এফআইআর (u/s 295A) দায়ের করেছেন। তিনি মনে করেন এই ঘটনায় শিখদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে। বলেন, ‘আমরা চাই পুলিশ ২৯৫ ধারায় মামলা শুরু করুক। তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্যে ওই যুবককে নিয়ে টানাহেঁচড়া করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে রাজনীতি হোক তা আমরা চাই না। শুধু বলবিন্দর এবং তাঁর পরিবারের লোকজন যাতে বিচার পান, সেই চেষ্টাই আমরা করছি।’
তিনি আরও দাবি করেন, বলবিন্দরের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স সারা ভারতে প্রযোজ্য। বলবিন্দরের জামিনের জন্য মঙ্গলবার হাইকোর্টে আবেদন করা হবে বলেও তিনি এদিন জানিয়েছেন। মনজিন্দরের কথায়, ‘আশাকরি অভিযোগের প্রেক্ষিতে দোষী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজিপি।’
বলবিন্দর সিং আদতে পঞ্জাবের বাসিন্দা। ব্যারাকপুরের বিজেপি নেতা প্রিয়াঙ্গুর সিংয়ের দেহরক্ষী। হাওড়া সিটি পুলিশের দাবি, বলবিন্দরের লাইসেন্স জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরি সেক্টরের। নিয়মানুযায়ী ওই জেলার বাইরে আসার কথা নয়। বলবিন্দরের লাইসেন্স পরীক্ষার জন্য তাঁকে রাজৌরিতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। রবিবার তাঁকে হাওড়া আদালতে তোলা হলে, বিচারক বলবিন্দরকে আট দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
বৃহস্পতিবার বিজেপির নবান্ন অভিযানের সময় আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার করা হয়েছিল বলবিন্দর সিং-সহ আরও দু’জনকে। আদালতে পেশ করা হলে, ভারপ্রাপ্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ধৃতদের আট দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। তাঁর পি’ স্ত’ ল লাইসেন্সপ্রাপ্ত বলে দাবি করলেও উপযুক্ত কাগজপত্র পেশ করতে পারেননি বলবিন্দর।
এদিকে, পাগড়ি বিতর্কে দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র তেজিন্দর পাল সিং বগ্গা জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনে চিঠি দিয়ে কঠিনতম পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে কমিশনের অন্যতম সদস্য আতিফ রশিদ ট্যুইট করে জানান, মঙ্গলবারের মধ্যেই কমিশন একটা ব্যবস্থা নেবে। বগ্গা চিঠিতে লেখেন, বাংলায় যা ঘটছে তা ক্ষমার অযোগ্য। সিকিওরিটি অফিসার বলবিন্দর সিংয়ের উপর পাশবিক আক্রমণ হয়েছে। তাঁর পাগড়ি খুলে পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ তাঁকে অসম্মান করেছে। এই ঘটনা লজ্জাজনক। দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র চিঠিতে উল্লেখ করেন, এই ঘটনার জেরে ওই রাতে তাঁর ঘুম হয়নি। এটা ভোলা যায় না। আমি আর্জি জানাচ্ছি, দোষী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ করুন। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। শাসকদলের দাবি, বিজেপি বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক করার চেষ্টা করছে।